কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লার মুরাদনগরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ এই শিল্পটি সঙ্কটের মুখে পড়েছে।
প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের ভিড়ে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প। এরপরও অনেকেরই চেষ্টা করেছেন পূর্বপুরুষদের এই ঐতিহ্যবাহী পেশাকে ধরে রাখার।
আরও পড়ুন: রাজগঞ্জের নারীদের তৈরি হস্তশিল্প যাচ্ছে ইউরোপে
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার রামচন্দ্রপুর ও কামাল্লার পালপাড়া এলাকায় এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত কয়েকশ' মৃৎশিল্পীর পরিবার এখন সবকিছু গুটিয়ে বসে আছে। মাটির তৈরি খেলনা, হাঁড়ি-পাতিল জাতীয় জিনিসগুলো বিক্রি না হওয়ায় কুমারপাড়া এখন অনেকটা নীরব। তাদের হাতে কোনো কাজ নেই, মানবেতর জীবন যাপন করছে উপজেলার কয়েকশ' মৃৎশিল্পীর পরিবার।
শিল্পীরা জানান, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র বের হওয়ার কারণে মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো চলে না। দীর্ঘ এক বছর ধরে কোনো ধরনের মেলা বা সামাজিক অনুষ্ঠান না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। আগে তেমন একটা প্লাস্টিক ও অ্যালুমুনিয়াম জাতীয় পণ্য বাজারে না থাকায় মাটির তৈরি কলসি, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, মটকা, ফুলের টপসহ নানা সামগ্রী বেশি বেশি বিক্রি হতো। কিন্তু এখন প্লাস্টিক-অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় পণ্যে বাজারে সয়লাব, তার ওপর দাম কম থাকায় প্রতি ঘরে ঘরে এসব সামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে গেছে। যার কারণে মাটির তৈরি তৈজসপত্র এখন তেমন একটা বিক্রি হয় না। ফলে মৃৎশিল্পীরা পরিবার নিয়ে আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটচ্ছেন।
আরও পড়ুন:গবাদিপশুর সাথে মানুষের বসবাস
উপজেলার কামাল্লা গ্রামের সুমন পাল বলেন, বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের এই জাত ব্যবসা আজও কিছুটা ধরে রেখেছি। কামাল্লাসহ আশপাশের এলাকায় এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু বর্তমানে তেমন একটা চাহিদা নেই। আর মাটি থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম যে পরিমাণে বাড়ছে কাজ করে আর লাভের মুখ দেখি না।
মৃৎশিল্পী আসুতোশ পাল বলেন, ‘এখন আর আগের মতো নাই, দিন পাল্টেছে। মানুষ আর আমাদের জিনিসপত্র তেমন একটা নেয় না। চাহিদা কম, তার উপর আবার সকল জিনিসের দাম বেশি।’
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
মৃৎশিল্পী নমিতা রাণী পাল বলেন, বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি। এছাড়া কোন কাজ জানি না। এতো কষ্ট করে সব তৈরি করি। তাতেও বাজারে তার কোন চাহিদা নেই। বিভিন্ন হাটে দোকান দিয়ে বেড়াই। যা বিক্রি হয়, তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোন রকম দিন কাটাচ্ছি।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ বলেন, ‘অন্যান্য সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অনুদানের তালিকায় মৃৎশিল্পের নাম আনা হয়েছে। সমাজকল্যান অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে তারা আধুনিকতার সাথে মিল রেখে শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে পারে।’
আরও পড়ুন:
ইউএনও বলেন, ‘আমরা দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে বিভিন্ন সময় শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণ করেছি। তারপরও যদি মৃৎশিল্পীদের মধ্যে কোনো দুস্থ ও অভাবগ্রস্ত পরিবার আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করবো।’